
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার শেরপুর সড়কে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ও লজ্জাজনক ঘটনা। ২০২৫ সালের ১৫ জুন রাতে, ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা পথে এক কলেজছাত্রীকে চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। মানবতা, নিরাপত্তা ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের এই ঘটনায় সারাদেশের মানুষ শোকাহত, ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন।
ঘটনার বিবরণ:
জানা গেছে, ভিকটিম কলেজছাত্রী ঢাকায় লেখাপড়া শেষে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন। শেরপুর থেকে নবীগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে করে তিনি রাতের যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু বাসের ভিতরেই শুরু হয় বিভীষিকার অধ্যায়। বাসে থাকা হেলপার লিটন প্রথমে কলেজছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। এরপর চালক সাব্বির মেয়েটির আর্তনাদ উপেক্ষা করে, নিজেরাও তাকে ধর্ষণ করে। বাসটি চলতে থাকে নবীগঞ্জের দিকে, আর বাসের ভিতরে চলতে থাকে নারকীয় নির্যাতন।
জনতার প্রতিরোধ:
ভিকটিমের করুণ আর্তনাদ শুনে সড়কের পাশে থাকা স্থানীয় লোকজন সজাগ হয়ে ওঠে। তারা নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কের তিনতালাব পুকুরপাড় এলাকায় বাসটি থামিয়ে দেয় এবং চালক সাব্বিরকে ধরে ফেলে। বিষয়টি সেনাবাহিনীর নিকট জানানো হলে, তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে চালক সাব্বিরকে হেফাজতে নেয়। তবে ঘটনার অন্যতম মূল হোতা হেলপার লিটন অন্ধকারের সুযোগে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও পুলিশের ভূমিকা:
সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে একদল সদস্য ভিকটিম এবং অভিযুক্ত ড্রাইভারকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এরপর নবীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়। থানার ওসি নিশ্চিত করেছেন যে, এই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের প্রযুক্তি নির্ভর অভিযান ও লিটনের গ্রেফতার:
ঘটনার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি ও নজরদারি শুরু করে র্যাব। আধুনিক প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবশেষে রাতেই র্যাব সদস্যরা এক সফল অভিযানে কুখ্যাত ধর্ষক হেলপার লিটনকে আটক করতে সক্ষম হয়। তার গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে।
জনরোষ ও নিন্দা:
এই ঘটনার পর নবীগঞ্জসহ সারা জেলায় ব্যাপক জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ধিক্কার, ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের ঝড়। বহু মানুষ বলেন, “এই ধর্ষকদের কারণে নবীগঞ্জের নাম কলঙ্কিত হয়েছে।” স্থানীয় মানুষ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
প্রশাসনের অঙ্গীকার:
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এই মামলার তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। কোনোভাবেই অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এবং নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে আরও কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
নবীগঞ্জে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, নারীর নিরাপত্তা এখনও প্রশ্নের মুখে। তবে সাধারণ মানুষের সাহসিকতা, সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ ও র্যাবের কার্যকর অভিযান প্রমাণ করে—যদি সকলে একত্রিত হয়, তাহলে অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। এখন অপেক্ষা, দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির, যাতে আর কোনো মা-বোন এভাবে নির্যাতনের শিকার না হন।
0 মন্তব্যসমূহ