নবীগঞ্জ শহরে ভয়াবহ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চিত্র ॥ নিহত ১ ॥ শতাধিক আহত ॥ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নবীগঞ্জ থেকে প্রকাশকাল: ৮ জুলাই ২০২৫ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহর সোমবার বিকেলে চার ঘণ্টাব্যাপী ভয়াবহ সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং ভাঙচুরের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাঁচদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ নেয় এ সংঘর্ষে। এতে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ও বাসাবাড়ি। আগুন ও লুটপাটে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ী মহল।
ঘটনার বিবরণ:সোমবার (৭ জুলাই) বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ চলে। বিকেল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু এর পরও প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। ঘটনার সময় দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে, পুড়ে যায় ট্রান্সফরমারসহ বিদ্যুৎ লাইন, ফলে পুরো শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সড়কগুলো হয়ে পড়ে জনমানবশূন্য, আতঙ্কে অনেক বাসিন্দা ঘরবন্দি থাকেন। নিহত ও আহতের তালিকা: সংঘর্ষে আহত পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের আউয়াল মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৪৫) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন একই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংঘর্ষের মূল কারণ: সংঘর্ষের সূচনা ঘটে নবীগঞ্জ উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও যুবলীগের সাবেক নেতা আশাহিদ আলী আশা এবং নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য ও সাংবাদিক সেলিম তালুকদারের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম তালুকদারের শ্যালক খসরু তালুকদারের সঙ্গে আশাহিদের বাকবিতণ্ডা ও মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। সোমবার সকালে পূর্ব তিমিরপুর ও আনমনু গ্রামের লোকজন পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় প্রস্তুতি মিটিং করে। বিকেলে দুই পক্ষের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে হামলা:সংঘর্ষের সময় অন্তত ২০০টির বেশি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। শহরের পশ্চিম বাজার ও মাছ বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় আগুন দেওয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক ও ফার্মেসিও হামলার শিকার হয়। ব্যাটারিচালিত মিশুক, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বহু যানবাহন ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সংঘর্ষের সুযোগে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে বাজারে ঢুকে মালামাল লুট করে। প্রশাসনের পদক্ষেপ: নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন,বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।”নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন,আমরা সংঘর্ষ প্রতিরোধে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। বর্তমানে পুরো শহর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।”তিনি জানান, সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। হাসপাতালের তথ্য: নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ জানান,আমাদের হাসপাতালে প্রচুর আহত রোগী ভর্তি হয়েছেন। নিহত ফারুক মিয়াকে আমরা সিলেট রেফার করেছিলাম, পথে তার মৃত্যু হলে লাশ আবার হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়।”নবীগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি আপাতত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জনমনে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল চলছে। ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ দ্রুত স্থিতিশীল পরিবেশ কামনা করছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ