
ঢাকা, শনিবার — দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের কিংবদন্তি, বরেণ্য লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভিন আর নেই। আজ শনিবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
ফরিদা পারভিনকে বাংলাদেশের লালনসংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরে জন্মগ্রহণ করা এই শিল্পী কৈশোর থেকেই সংগীতচর্চা শুরু করেন। প্রথমে শাস্ত্রীয় সংগীতে হাতেখড়ি হলেও পরবর্তীতে তিনি লালনগীতি গাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের অনন্য পরিচিতি গড়ে তোলেন। তার কণ্ঠে “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি”, “তুমি জান না হৃদয় মাঝে”, “পিয়ালের ডালে দোলে দোলনাচাঁপা ফুল” সহ অসংখ্য লালনগীতি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
তিনি শুধু একজন গায়িকা নন, ছিলেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও এক শক্তিশালী কণ্ঠ। অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতা আর প্রেমের বার্তা বহনকারী লালনের গান তিনি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর গানে সহজভাবে ফুটে উঠত বাউলদর্শন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মানবিকতার পাঠ দিয়েছে।
ফরিদা পারভিনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৮৭ সালে একুশে পদক এবং ২০১১ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
সংগীত জগতে তার প্রস্থানকে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন সহশিল্পী ও সংস্কৃতিমনা মানুষ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাঁর মরদেহ আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হবে, যেখানে সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। এরপর তাঁর পৈতৃক নিবাস নাটোরে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।শিল্পীর মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।বাংলাদেশের গানপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে ফরিদা পারভিন চিরকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর কণ্ঠের প্রতিটি সুর হয়ে থাকবে বাংলার মাটির ঘ্রাণ, মানুষের অন্তরের কথা আর মানবতার জয়গান।
0 মন্তব্যসমূহ